সবজির দাম নিয়ন্ত্রণ করা যেতে পারে যেভাবে

সবজির দাম নিয়ন্ত্রণ করার কোনো সম্ভাবনা নেই। সামনের শীতেও সবজির দাম বেশি-ই থাকবে। তবে দাম কমিয়ে আনার জন্য সরকার কিছু পদক্ষেপ নিতে পারে। সরকারকে এখন কঠোর পদক্ষেপ নেওয়া ছাড়া উপায় নাই। আড়তের ফরিয়া মধ্যস্বত্ব দালাল ব্যাবসায়ীগুলোর মেরুদণ্ড ভেঙে দিতে হবে।

গত দুই মাস ধরে আমাদের ফার্ম থেকে যেসব কৃষক সবজি চারা নিয়ে রোপন করেছিলেন, সেপ্টেম্বর ও অক্টোবরের অতি বৃষ্টিতে সেসব বেশিরভাগই নষ্ট হয়ে গেছে। এখন কৃষকদের নতুন করে চারা রোপন করতে হচ্ছে। জুন এবং জুলাইতে দেশজুড়ে বন্যার কারণে এমনিতেই কৃষকেরা ক্ষতির মধ্যে আছেন।

যেসব এলাকায় গ্রীষ্ম এবং বর্ষাকালীন সবজির আবাদ হয় সেসব এলাকার কৃষকেরা পুঁজি হারিয়ে অনেকেই ঋণ করে আগাম শীতকালীন সবজি চাষ শুরু করেছিলেন। কিন্তু সেপ্টেম্বরের শেষে যে এমন বিধ্বংসী বৃষ্টি হবে কে জানত? এদিকে দেশ জুড়ে সবজির জন্য হাহাকার শুরু হয়ে গেছে।

হবেইতো। আজ প্রথম আলোর রিপোর্টে দেখলাম, যশোরের পাইকারি সবজির হাট বারীনগর মোকাম থেকে অন্যান্য বছরের এই সময়ে যেখানে দৈনিক ৫০/৬০ ট্রাক সবজি ঢাকা সহ দেশের বিভিন্ন জেলায় যেত, সেখানে এখন দৈনিক ১০/১৫ ট্রাক সবজি যাচ্ছে। বগুড়ার মহাস্থান হাটেরও একই চিত্র।

সিলেট বিভাগে বর্ষাকালীন সবজি চাষ নাই বললেই চলে, তারপরও গন্তব্যে পৌঁছানোর পরেই আড়তে বা পাইকারি পর্যায়ে মোকামের চেয়ে দাম দেড় গুন পর্যন্ত বেড়ে যায়। ট্রাক থেকে সবজি নামানোর পর পাইকারের হাতে ওঠা পর্যন্ত ২-৩ ঘন্টার মধ্যে ২-৩ টা হাতবদল হয়।

 

মধ্যরাতে আড়তগুলোতে সবজি হাতবদলের যে প্রতারণামূলক অনৈতিক কারবার চলে তা সম্পূর্ণ রূপে ধ্বংস করে দিতে হবে। প্রয়োজনে ‘বাজার নিয়ন্ত্রণের জন্য জরুরি অবস্থা’ জারি করতে হবে।

 

আমার মতে যেভাবে সবজি পণ্যের দাম নিয়ন্ত্রণ করা যেতে পারে:

 

১. প্রথমে সরকারকে লোকবল বাড়াতে হবে।

 

২. পাইকারি বাজারে বা আড়তে সার্বক্ষণিক গোয়েন্দা নজরদারি চালাতে হবে।

 

৩. আড়তগুলোতে সারারাত গোয়েন্দা বাহিনী, পুলিশ ও আধাসামরিক বাহিনী উপস্থিত থেকে ট্রাক থেকে সবজি নামানোর কাজ তদারকি করবে।

 

৪. সরবরাহকারী মোকামগুলোতে সরকারের মনিটরিং জোরদার করতে হবে।

 

৫. মোকাম থেকে কেনা পণ্য মূল্যের সঙ্গে পাইকারি আড়তের মূল্যের সামঞ্জস্য থাকতে হবে।

 

৬. সরকারকে প্রজ্ঞাপন দিয়ে ঘোষণা দিতে হবে যে, বাংলাদেশের প্রতিটি বাজারের খুচরা বিক্রেতাদেরকে আড়ত থেকে কেনা পণ্যের রশিদ বাধ্যতামূলক ভাবে সংরক্ষণ করতে হবে। অন্যথায় ১০ হাজার টাকা বা এরূপ জরিমানা।

৭. দীর্ঘ মেয়াদী উদ্যোগ হিসেবে প্রতিটি জেলায় একটি করে ফারমার্স মার্কেট  তৈরি করতে হবে। যেখানে সরাসরি কৃষক তার উৎপাদিত সবজি পণ্য নিয়ে হাজির হবে, এবং সরাসরি ভোক্তা এবং খুচরা বিক্রেতারা তাদের কাছ থেকে পণ্য কিনে নিয়ে যাবে।

 

সরকারের আন্তরিক উপলব্ধি এবং সঠিক পদক্ষেপ ছাড়া সবজির দাম নিয়ন্ত্রণ অসম্ভব।

 

হাসান আহমেদ

হেড অফ অপারেশন: এমআরএফ এগ্রো ইন্ডাস্ট্রিজ

শেয়ার করুন
হাসান আহমদ
হাসান আহমদ

আধুনিক পলি হাউজে বিজ্ঞান সম্মত উপায়ে কোকোপিট দিয়ে প্লাস্টিক ট্রে'তে সবজি চারা ও গ্রাফটিং টমেটো চারা উৎপাদনে অভিজ্ঞ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *