অর্গানিক ও জৈব চাষাবাদে যেভাবে সফল হওয়া সম্ভব

অর্গানিক ও জৈব চাষাবাদ

বাংলাদেশে অর্গানিক ও জৈব চাষাবাদ সম্ভব নয় এমন একটা ধারণা ইতিমধ্যে তৈরি হয়ে গেছে প্রায়। অর্গানিক চাষাবাদ করে সফল না হলেও অনলাইনে জনপ্রিয় এমন কিছু কৃষি উদ্যোক্তা নিয়মিত ভাবে অর্গানিক চাষাবাদ বিরোধী প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছেন। দেশে অর্গানিক সবজির ভোক্তা নেই, বাজার নেই, উৎপাদন খরচ বেশি, পাইকারি আড়তে চাহিদা নেই- এসব সমস্যার কথা তারা বলছেন।

 

প্রথমেই বলি আমাদের দেশে যে অর্গানিক সবজির বাজার একেবারে নেই তা নয়। অর্গানিক সবজি পন্যের রাজধানী কেন্দ্রীক একটা বড় বাজার রয়েছে যেটা বিক্ষিপ্তভাবে গুটি কয়েক বড় প্রতিষ্ঠান দখল করে রেখেছে। বাজারটি আমদানি নির্ভর এবং সুপারশপ ভিত্তিক। সেখানে আমাদের কৃষকদের তাদের ট্র্যাডিশনাল উৎপাদন পদ্ধতি ও সীমাবদ্ধতার কারণে পৌঁছানো সম্ভব নয়। তবে বানিজ্যিক ভাবে অর্গানিক চাষাবাদে যারা আগ্রহী তাদেরকে এই বাজারটিকে ফোকাস করতে হবে এবং সেটা খুঁজে নিতে হবে সঠিক পদ্ধতিতে মার্কেট রিসার্চ এবং মূল্যায়নের ভিত্তিতে।

 

বাংলাদেশকে বলা হয় পৃথিবীর সেলাই ঘর। ঢাকা শহরে গার্মেন্টস শিল্পের সঙ্গে জড়িত হাজার হাজার বিদেশি বসবাস করে। এছাড়াও বিভিন্ন মাল্টিন্যাশনাল কোম্পানি এবং দূতাবাসগুলোতে প্রচুর পরিমাণে বিদেশি কর্মরত রয়েছেন যারা অর্গানিক সবজি পন্যের প্রধান ভোক্তা। বর্তমান ডিজিটাল মার্কেটিং এর যুগে ডিজিটাল মার্কেটিং এর বিভিন্ন টুল ব্যাবহার করে (যেমন ওয়েবসাইট, এসইও, ইমেইল মার্কেটিং, ফেসবুক এড ইত্যাদি) এই বিশাল ভোক্তা শ্রেণিকে অর্গানিক পন্যের একটি প্লাটফর্মে যুক্ত করা অসম্ভব নয়। এর জন্য প্রয়োজন শক্তিশালী একক উদ্যোগ অথবা কৃষকদের সম্মিলিত প্রচেষ্টা যা যৌথ ভাবে কৃষকদের প্রশিক্ষণ, উৎপাদন এবং বাজার ব্যাবস্থাপনায় কাজ করবে। এটা এই মুহূর্তে বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে একটা অসাধারণ স্টার্টআপ বিজনেস হতে পারে। যা ভবিষ্যতে রফতানিমুখি হয়ে উঠতে পারে।

 

এই বাজার বেসরকারিভাবে সম্মিলিত উদ্যোগের মাধ্যমে প্রতিষ্ঠিত করা সম্ভব।

 

মাথায় রাখতে হবে প্রচলিত বাজারের আড়ত বা সবজির দোকান অর্গানিক সবজি পন্যের বাজার নয়।

 

অর্গানিক চাষাবাদের অনেক রকমের শর্ত আছে।

প্রধান শর্ত হচ্ছে অর্গানিক চাষাবাদের জমি রাসায়নিক ব্যাবহার হয় এমন জমি থেকে তিন কিলোমিটার দূরে হতে হবে এবং ন্যুনতম তিন বছর রাসায়নিক পদার্থ প্রয়োগ করা হয়নি এমন জমি অর্গানিক চাষাবাদের জন্য উপযুক্ত।

 

বাংলাদেশ ঘনবসতিপূর্ণ দেশ এবং জমি স্বল্পতার কারণে বানিজ্যিক ভাবে অর্গানিক চাষাবাদ খুবই চ্যালেঞ্জিং একটি বিষয়, তবে তা যে একেবারেই অসম্ভব তা নয়।

 

এছাড়াও আরও অনেক শর্ত রয়েছে যা আমাদের দেশের কম শিক্ষিত বা প্রশিক্ষণবিহীন কৃষকদের দ্বারা পূরণ করা সম্ভব নয়। এর জন্য সরকারি বেসরকারি শক্তিশালী উদ্যোগের প্রয়োজন। বাজার তৈরি করা প্রয়োজন। সচেতনতা তৈরি করা প্রয়োজন। এর জন্য সঠিক প্রশিক্ষণ এবং প্রস্তুতি দরকার। কথা হচ্ছে, কে করবে এসব?

 

বিভিন্ন মানদন্ড অনুসরন করে রাসায়নিক ক্যামিকেল কম ব্যাবহার করে অথবা জৈব বালাইনাশক ব্যাবহার করে জৈব পদ্ধতিতে চাষাবাদ করা যায়। এই পদ্ধতি অর্গানিক না হলেও মানব স্বাস্থ্যের জন্য নিরাপদ। এই নিয়ম অনুসরণ করেই ইওরোপ এবং মধ্যপ্রাচ্যে সবজি রফতানি হয়। এই বাজার দ্রুত বর্ধনশীল। এই বাজার আমাদেরকে ধরতেই হবে।

 

ভারতে অর্গানিক চাষাবাদের জন্য ‘শিভান্স ফার্মিং’ মডেল খুব জনপ্রিয়, এবং এটা লাভজনক। ‘দি হান্স ফাউন্ডেশন’ এই পদ্ধতিকে ভারতজুড়ে  জনপ্রিয় করে তুলেছে। আমাদের দেশে এরকম প্রতিষ্ঠান আছে কিনা জানা নেই। এ বিষয়ে অন্যদিন বিস্তারিত আলোচনা করব।

 

কিন্তু কিছু লোক এসব সীমাবদ্ধতাকে অতিক্রম করতে না পারার ব্যর্থতার ফলাফল নিরাপদ সবজি উৎপাদনে আগ্রহীদের উপর চাপিয়ে দিতে চাইছেন। এটা খুবই অগ্রহণযোগ্য।

 

পৃথিবীতে মানব স্বাস্থ্যের জন্য নিরাপদ খাদ্যের প্রয়োজনীয়তা অপরিসীম। সেজন্য অবশ্যই মানুষকে এগিয়ে আসতে হবে। ব্যাক্তিগত লাভ-লসের হিসাব দেখিয়ে মানুষকে ভালো কাজে নিরুৎসাহিত করা ঠিক নয়।

শেয়ার করুন
হাসান আহমদ
হাসান আহমদ

আধুনিক পলি হাউজে বিজ্ঞান সম্মত উপায়ে কোকোপিট দিয়ে প্লাস্টিক ট্রে'তে সবজি চারা ও গ্রাফটিং টমেটো চারা উৎপাদনে অভিজ্ঞ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *