আমার সম্পর্কে

কোকোপিট ও প্লাস্টিক ট্রে ব্যবহার করে সবজি চারা উৎপাদন ও নার্সারি তৈরিতে অভিজ্ঞ

Hasan Ahmad হাসান grameen danon

হাসান আহমদ

আমি হাসান আহমদ। ২০১১ সাল থেকে ২০২০ সালের ফেব্রুয়ারী মাস পর্যন্ত বাংলাদেশের দুটি শীর্ষস্থানীয় মাল্টিন্যাশনাল কোম্পানির বিক্রয় বিভাগে আঞ্চলিক ব্যাবস্থাপক হিসেবে কাজ করেছি।

কাজের বাহিরে আমার আগ্রহের মূল জায়গা ছিল বই পড়া ও লেখালেখির চর্চা এবং আধুনিক কৃষি সম্পর্কে জানার চেষ্টা। দু হাজার বিশ সালের শুরুতে কোভিডকালীন কোয়ারেনটাইনের দিনগুলোতে যখন আমরা সবাই ঘরবন্দী, তখনই আমি আধুনিক কৃষির ওপর ইনটেনসিভ পড়াশোনা শুরু করি।

সে সময় কার্যত মানুষের জীবন-ধারা স্তব্ধ হয়ে পড়েছিল। বিশ্ব জুড়ে খাদ্য সরবরাহের শৃঙ্খল পুরোপুরি ভেঙে পড়েছিল। ব্যবসা বানিজ্য সব বন্ধ হয়ে গিয়েছিল। সমগ্র পৃথিবীব্যাপী কোভিড মহামারীতে একদিকে লক্ষ লক্ষ মানুষের মৃত্যু হচ্ছে, আর অন্যদিকে উৎপাদন বন্ধ হয়ে যাবার কারণে কোটি কোটি মানুষ জীবিকাহীন হয়ে পড়েছিল।

তখন আমি এটা মনে-প্রানে বিশ্বাস করতে শুরু করলাম যে, ভবিষ্যৎ পৃথিবীতে বেঁচে থাকতে হলে মানুষের দুটো জিনিসের প্রয়োজন হবে:

প্রথমত প্রযুক্তি, দ্বিতীয়ত কৃষি।

কেননা, প্রযুক্তি ছাড়া যেমন আধুনিক পৃথিবীকে কল্পনা করা যায়না, তেমনি টেকসই  কৃষি ছাড়া মানুষের খাদ্য উৎপাদন ও সরবরাহ চেইন নিশ্চিত করা সম্ভব নয়।

গ্রীন হিল সীডলিং ফার্ম
"গ্রীন হিল সীডলিং ফার্ম" এর শুভযাত্রা
গ্রীনহিল সীডলিং ফার্ম উদ্বোধন
উদ্বোধনীর দিনে সুনামগঞ্জ জেলার মাননীয় জেলা প্রশাসক মহোদয়, জনাব মোহাম্মদ আবদুল আহাদ এবং উপজেলা নির্বাহী অফিসার মহোদয় জনাব ইয়াসমিন নাহার রুমা।

গ্রীনহিল সীডলিং ফার্ম সুনামগঞ্জ

যদিও কৃষির ওপর আমার কোন প্রাতিষ্ঠানিক পড়াশোনা ছিলনা, এমনকি কৃষিতে আমার কোন অভিজ্ঞতাও ছিল না; কিন্তু কৃষি ও কৃষি কাজের প্রতি গভীর ভালবাসা এবং বিষয়টিকে বোঝার অদম্য আগ্রহের কারণে কৃষি উৎপাদনের তাত্বিক বিষয়গুলো বুঝতে আমার কোন অসুবিধা হয়নি। অনলাইন থেকে কৃষি বিষয়ক প্রচুর বাংলা ও ইংরেজি বই সংগ্রহ করি।

বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় এবং বিশ্বের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের ভেজিটেবল এক্সটেনশন ডিপার্টমেন্ট এর অনলাইন রিসোর্স থেকে প্রচুর বই ডাউনলোড করে প্রিন্ট করে বই বানিয়ে পড়তে শুরু করি। বিশেষ করে ‘সয়েল হেলথ ম্যানেজমেন্ট’, ‘ইন্টিগ্রেটেড পেস্ট ম্যানেজমেন্ট’ বা IPM ও ‘ক্রপ কালটিভেশন মেথড’ বিষয়গুলো আত্মস্থ করি।

কৃষিতে আমার আগ্রহের জায়গা ছিল আধুনিক পদ্ধতিতে বানিজ্যিক ভাবে কিভাবে সবজি চারা উৎপাদন ও বাজারজাত করা যায়। সে সময়, এপ্রিল ২০২০ সালে, ওয়ার্ল্ড ভেজিটেবল সেন্টার কর্তৃক আয়োজিত এবং এশিয়ান ভেজিটেবল রিসার্চ এন্ড ডেভেলপমেন্ট সেন্টার (AVRDC) কর্তৃক বাস্তবায়িত “Healthy seedlings production and management in south and central Asia” শীর্ষক সপ্তাহব্যাপী একটি অনলাইন ট্রেনিং এ অংশগ্রহন করার সুযোগ পাই। সেই ট্রেনিংটি চারা উৎপাদন বিষয়ে আমার প্রথাগত ধারনাকে সম্পূর্ণ বদলে দিয়েছিল। এবং নতুন অনেক কিছু শিখতে পেরেছিলাম।

ব্যাক্তিগত পঠন-পাঠন এবং AVRDC এর প্রশিক্ষণ থেকে অর্জিত জ্ঞানের ওপর ভরসা করে দু’ হাজার বিশ সালের জুন মাসে সম্পূর্ণ নিজ উদ্যোগে  সুনামগঞ্জ জেলার সদর উপজেলার আমপারা গ্রামে জমি লিজ নিয়ে একটি আধুনিক পলিহাউজ নির্মাণ করি। সেখানে মাটি বিহীন পদ্ধতিতে প্লাস্টিক ট্রে’তে গ্রোয়িং মিডিয়া হিসেবে কোকোপিট ব্যাবহার করে সবজি চারা উৎপাদন শুরু করি।

গ্রীনহিল সীডলিং ফার্ম সুনামগঞ্জ 1
গ্রীনহিল সীডলিং ফার্ম সুনামগঞ্জ

নিজের উৎপাদিত সবুজ ও স্বাস্থ্যবান সবজি চারার দিকে তাকিয়ে নিজেই অভিভূত হয়ে পড়েছিলাম।

উৎপাদনের প্রথম মৌসুমে সুনামগঞ্জ ও সিলেট জেলার সবজি চাষী কৃষকদের কাছ থেকে অভাবনীয় সাড়া পাই, এবং, আমার স্বপ্ন বাস্তবে কাঠামো পেতে শুরু করে।

এটা উল্লেখ করা যেতে পারে যে, বৃহত্তর সিলেট অঞ্চলে আমিই প্রথম বানিজ্যিক ভাবে আধুনিক পলি হাউজে সবজি চারা উৎপাদন শুরু করি।

২০২০ সালের ১৪ ই অক্টোবর তারিখে সুনামগঞ্জ জেলার মাননীয় জেলা প্রশাসক মহোদয়, জনাব মোহাম্মদ আবদুল আহাদ এবং উপজেলা নির্বাহী অফিসার জনাব ইয়াসমিন নাহার রুমা আমার প্রতিষ্ঠান শুভ উদ্বোধন করেন। এবং সেখানে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর এর কর্মকর্তাবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন। সুরমার উত্তর পাড়ের পিছিয়ে পড়া কৃষকদের জন্য এক আনন্দের দিন ছিল সেটি।

 ২০২০, ২১ ও ২২ সাল এই তিন বছর “গ্রীনহিল সিডলিং ফার্ম” সুনামগঞ্জ জেলায় নিরবিচ্ছিন্নভাবে চারা উৎপাদন করে এবং কৃষকের কাছে চারা সরবরাহ করে। এ সময়ে সুনামগঞ্জ ও সিলেট জেলায় আমার প্রতিষ্ঠানের চারার চাহিদা ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি পায়। তাই উৎপাদন ও সরবরাহে বিঘ্ন ঘটে।

চাহিদা বৃদ্ধির কারণে পরবর্তীতে ২০২৩ সালের শুরুতে বৃহত্তর পরিসরে চারা উৎপাদনের লক্ষ্যে এবং কৃষকের কাছে সহজে চারা পৌঁছে দেওয়ার লক্ষে আমি সিলেটের স্বনামধন্য প্রতিষ্ঠান মুহিবুর রহমান ফাউন্ডেশন এর সঙ্গে যুক্ত হই। সিলেট সদর উপজেলার ধোপাগুল পয়েন্ট সংলগ্ন মহালদিক গ্রামে বৃহত্তর পরিসরে যাত্রা শুরু হয় এমআরএফ এগ্রো ইন্ডাস্ট্রিজ এর।

সিলেটে এক বিঘা জায়গার ওপর নির্মিত হয় আধুনিক পলি হাউজ। “এমআরএফ এগ্রো ইন্ডাস্ট্রিজ” আমার পরিকল্পনা, নির্দেশনা ও ব্যাবস্থাপনায় সিলেট জেলার বৃহত্তম এবং বাংলাদেশের অন্যতম বৃহৎ সবজি চারা উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানে পরিণত হয়। প্রতি ব্যাচে দশ লাখ চারা উৎপাদনের সক্ষমতা নিয়ে নতুনভাবে যাত্রা করি আমরা।

এম আর এফ এগ্রো ইন্ডাস্ট্রিজ সিলেট
এম আর এফ এগ্রো ইন্ডাস্ট্রিজ সিলেট

২০২৩ সালের জানুয়ারি থেকে আমি এই প্রতিষ্ঠানের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা হিসেবে দায়িত্ব পালন করে এসেছি। শত-শত কৃষকের স্বপ্নের সারথি হয়েছি। তাদের কাছে পৌঁছে দিয়েছি লক্ষ লক্ষ সবজি চারা। দিয়েছি পরামর্শ। সাফল্যে বদলে গেছে অনেক কৃষকের জীবন।

চারা উৎপাদনে আমার অভিজ্ঞতা এবং গত পাঁচ বছরে আমার অর্জিত সকল জ্ঞান আমি কৃষকের কাছে পৌঁছে দিতে চাই। কৃষকের জীবন বদলে দেওয়ার গল্পে আমার ভুমিকা নিশ্চিত করতে চাই। আমি বিশ্বাস করি, আধুনিক কৃষি প্রযুক্তির সঠিক ব্যবহার, চাষাবাদের সঠিক সময় নির্বাচন এবং বিজ্ঞানভিত্তিক ব্যাবস্থাপনা-ই পারে কৃষকের সাফল্য নিশ্চিত করতে।

গ্রীনহিল সীডলিং ফার্ম এর প্রতিবেদন দৈনিক পত্রিকা ও টিভি চ্যানেলে

এটিএন নিউজ রিপোর্ট  https://youtu.be/X_40pw7c6ZY

চ্যানেল আই রিপোর্ট http://bit.do/eeZSK

নিউজ টোয়েন্টিফোর চ্যানেল এর রিপোরটঃ https://www.facebook.com/share/v/18mjwR3G7B/

ওয়ার্ল্ড ভেজিটেবল সেন্টার এর ফেসবুক পেইজের কমেন্টে আমার উদ্যোগের প্রশংসা করে।

ওয়ার্ল্ড ভেজিটেবল সেন্টার তাদের ফেসবুক পেইজের একটি কমেন্টে আমার উদ্যোগের প্রশংসা করে।